সংস্থার কর্মসূচীসমূহ

মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা- সংগঠন পরিচিতি ও প্রেক্ষাপট

মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিক , অলাভজনক ও আর্তমানবতার সেবার ব্রত নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন।

২০০৫ সালে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক মো: ফজলুল হকের পরলোকগতা জননী ফাতেমা বেগমের পারলৌকিক কল্যাণ ও স্মৃতির উদ্দেশ্য একটি পারিবারিক সংগঠন “ ফাতেমা ফাউন্ডেশন” গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠাতার পিতা আলহাজ্জ বদর উদ্দিন ( বর্তমানে পরলোকগত)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং বারুয়ামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সিনিয়র শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রায় এগারো বছর “ ফাতেমা ফাউন্ডেশন” কয়েকজন এতিম শিক্ষার্থীকে মাসিক শিক্ষাভাতা প্রদান করে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখে। ফাউন্ডশনের কার্যক্রমে সন্তষ্ট হয়ে আরো দুইজন পরলোকগতা রত্নগর্ভা মায়ের সন্তানেরা ফাউন্ডেশনে অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই দুইজন রত্নগর্ভা মা হলেন  নুরুন্নাহার বেগম ও ছালেমা খাতুন । আলহাজ্জ মকবুল হোসেন মাস্টারের অনুপ্রেরণায় তাঁরা এই বিষয়ে আগ্রহী হোন।

আশপাশের মানুষের উৎসাহ ও অংশগ্রহণের মনোভাব “ফাতেমা ফাউন্ডশেন”কে পারিবারিক গন্ডি থেকে বের করে সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। বিশিষ্টজনদের সাথে একাধিকবার বৈঠকের পরে পৃথিবীর সকল মায়েদের নামে উৎসর্গ করে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে “ মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা” রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন তৎকালীন সময়ের এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় সমাজসেবক হাজী মহব্বত উল্লাহ মাস্টার ( মরহুম)। তাঁকে সম্মান জানিয়ে, সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধা রেখে ২০১৬ খ্রি. “ মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা ” মায়ের মমতা দিয়ে দুস্থ মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল “ মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা” গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে তালিকাভ‚ক্ত হয়। যার নিবন্ধন নং ম০২০৫১।

সংস্থার চলমান কর্মসূচী

১. এতিম/অসহায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভাতা প্রদানঃ  এতিম ( পিতৃহীন), ডিভোর্সী মায়েদের সন্তান ও যেসকল শিক্ষার্থীর পিতা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কেবল তারাই এই ভাতা পাবার অধিকারী। অর্থের অভাবে যাতে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত না হয় একারণেই এই কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এই সুবিধার আওতায় আসবে। বর্তমানে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে এই শিক্ষাভাতা প্রদান করা হয়। অর্থপ্রপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। উল্লেখ্য, শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীকেই এই সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।

২. মাসিক দুস্থভাতা প্রদান কর্মসূচিঃ কাজ করতে অক্ষম ( শারিরীক ও মানসিকভাবে) ব্যক্তিদের জীবনধারণে সহযোগিতার লক্ষ্যে বয়স্ক, ব্যধিগ্রস্থ,প্রতিবন্ধি. বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ব্যক্তিদের এই ভাতা ( মাসিক) প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, পেশাগত ভিক্ষুকদের এই ভাতার আওতায় আনা হয় না। বর্তমানে ১০০ জনকে প্রতিমাসে দুস্থভাতা প্রদান করা হয়। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আছে।

৩. শ্রমজীবি মানুষদের জন্যে আপতকালীন সহযোগিতা কর্মসূচিঃ শ্রমজীবি মানুষেরা, দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে যাদের জীবন-জীবিকা আবর্তিত হয়- তারাই দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখছে। কিন্তু আকস্মিক কোন দূর্ঘটনা বা ভয়ঙ্কর কোনো অসুখের কারণে তাদের জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। এই সময়টা তাদের পরিবার কঠিন সময় পার করে। সংস্থা এই সময়টাতে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এইসকল দূর্দশাগ্রস্থ পরিবারকে এককালীন ৫০০০-১০,০০০ টাকা প্রদান করে তাদের আপতকালীন সময়টাকে একটু সহজ করার প্রচেষ্টা করা হয়। দূর্ঘটনা ও ব্যধিগ্রস্থ শ্রমজীবিরাই কেবল এই সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।

৩. চিকিৎসা সহায়তা কর্মসূচিঃ অসহায় দরিদ্র লোকদের চিকিৎসা সহায়তা ( আর্থিক) প্রদান করার জন্যে এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।

৪. মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা ( প্রক্রিয়াধীন) নির্দিষ্ট কয়েকটি সেন্টারে মাসে একবার এমবিবিএস সনদধারী চিকিৎসককে দিয়ে ব্যবস্থাপত্র প্রদান ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা। দরিদ্র অসহায় মানুষ যাতে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পেতে পারে এ কারণে এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।

৫. মানুষ মানুষের জন্যেঃ কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাদের সাহায্য, দরিদ্র/অসহায়দের দাফনকাফনের ব্যবস্থা, দূর্যোগকালীন সময়ের তাৎক্ষণিক ত্রাণ কার্যক্রম

ইত্যাদি বিবিধ আর্তমানবতার সেবামূলক কার্যক্রম। উল্লেখ্য, করোনা মহামারীকালীন সময়ে ব্যাপক ত্রাণ কার্য পরিচালনা করা হয় এই কর্মসূচির আওতায়।

৬. হাত হোক হাতিয়ারঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র বেকার যুবক/যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বিনা সুদে কালীন কর্জ প্রদান করে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তোলা।

৭. সম্মান ও সম্মাননা প্রদানঃ সমাজ সেবার কাজকে উৎসাহ প্রদানের জন্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান। প্রয়াত বিশিষ্টি ব্যক্তিদের নামে পদক প্রদান করে জীবিতদের সমাজসেবায় আগ্রহ সৃষ্টি করা। ৮. ধর্মীয় সহনশীলতা ও সহাবস্থান সম্পর্কিত প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞানের উপর স্কুল/কলেজে সেমিনার সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা।

কর্মসূচী

আমাদের ইউনিক কিছু কর্মসূচীঃ

শিক্ষাভাতাঃ সাধারণ শিক্ষায় (মাধ্যমিক পর্যায় ৬ষ্ঠ-দ্বাদশ) আমরা এতিম/আর্থিক সঙ্গতিহীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মাসিক শিক্ষাভাতার প্রচলন করেছি। পারিবারিকভাবে দরিদ্র পিতৃহীন শিক্ষার্থী বা যেসকল শিক্ষার্থী ডিভোর্সী মায়ের সন্তান অথচ আর্থিক সঙ্গতিহীন এবং যাদের পিতা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তÑ সেইসকল অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সচল রাখার জন্যে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাধারণতঃ ধর্মীয় শিক্ষা ধারায় যদিও এদের পড়ালেখার সুযোগ আছে, কিন্তু সাধারণ শিক্ষা ধারায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এদের নিয়ে কেউ কাজ করছে না। কেউ কেউ করছেন, দরিদ্র কিন্তু মেধাবীদের নিয়ে। তবে আমরা প্রচলিত ধারণার মেধায় বিশ্বাসী না। আমরা মনে করি প্রতিটি মানুষেরই কোনো কোনো বিষয়ে মেধা আছে। তাই আমরা চাই অর্থের অভাবে কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে যেন বঞ্চিত না হয়।

শ্রমজীবী মানুষদের আপতকালীন সহযোগিতাঃ বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমের বাজার বলতে গেলে ভালোই। একজন শ্রমজীবী মানুষ কাজ করে অন্ততঃ দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে পারে। তবে দিন এনে দিনে খাওয়া লোকদের সঞ্চয় তেমন একটা থাকে না। তাই তাদের জীবনে হঠাৎ কোনো রোগ-ব্যাধী বা দূর্ঘটনা হানা দিলে পুরো পরিবারটাই তছনছ হয়ে যায়। এই সময়টাতে তাদের ব্যাকআপ দেয়াটা মানবতার দাবি। মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থা এই কাজটিই করার চেষ্টা করছে।

আমাদের কর্মসূচীগুলো নিবিড় পরিচর্যামূলক এবং জীবনঘনিষ্ট

আমাদের সকল কর্মসূচীই মানুষের জীবন ধারণ ও জীবন গঠনের মহান লক্ষ্য নিয়েই করা হয়েছে। আমরা মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখি, দূর থেকে নয়। আমরা ভালবাসা দিয়ে মমতা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই, দয়া বা করুণা দিয়ে নয়। আমরা মানুষকে মানুষ হিসাবেই দেখি, নিন্মশ্রেণীর দয়ার ভিখারী কোনো প্রাণী হিসাবে নয়। আমাদের কর্মসূচীগুলো পর্যবেক্ষণ করলে যেকেউ এই দিকগুলো দেখতে পারবেন।

সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই

বড় কাজের জন্যে চাই কিছু স্বাপ্নিক নির্লোভ মানুষ। মানুষের ভালবাসা কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না, সৌরভ হয়ে তা প্রকাশিত হবেই। আলহামদুল্লিাহ, মায়ের মমতা কল্যাণ সংস্থাও পরিচিত মানুষের কাছে একটা ভালবাসার নাম আস্থার নাম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে। এখন এই সৌরভটা ছড়িয়ে পড়লেই হলো। ইনশাল্লাহ আপনিও এই সৌরভের ভাগিদার হবেন এবং আপনার পাশের মানুষকে তার ভাগ দেবেন। এভাবেই গণমানুষের কাছে একটা সংগঠন আস্থার জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলে আমরা আমাদের দেশীয় ধর্মীয় দান দ্বারাই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জাতীয় উন্নয়নে শরীক করাতে পারবো ইনশাল্লাহ।

 আমাদের দাবি একটাই আমাদের উপর আস্থা রাখুন।

(লেখাটা প্রয়োজনে এডিট/ সংযোজন/ বিয়োজন করা যাবে।)